ইতিবৃত্ত


উত্তর ‌২৪ পরগনা জেলার প্রাচীনতম কালীপুজোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম পূজা বলে পরিচিত। মন্দিরটির কিছু ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। সাড়ে চারশো বছরের পুরানো এই কালীপুজো। কালীপুজোর দিন দেবী দর্শনের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা আসেন। তাছাড়া ওই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানান অলৌকিক কাহিনী। বিপদে পড়ে কেউ মায়ের কাছে এলে তিনি বিপদ থেকে উদ্ধার হবেনই, এমনই ধারণা মানুষের মধ্যে । ১৫৮৫ সালে অর্থাৎ ৪২৯ বছরের আগে এই দেবীর পুজোর প্রচলন করেছিলেন যশোহরের রাজা বিক্রমাদিত্যর পুত্র যুবরাজ প্রতাপাদিত্য রায়। যুবরাজ প্রতাপাদিত্য রাজ্যে বীর যোদ্ধা বাছাই করতে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন।প্রতাপাদিত্যের মানসিকতা ক্রমশ মোগল বিরোধী হয়ে উঠেছিল বলে পিতা বিক্রমাদিত্যর সন্দেহ হয়। ওই একটি প্রতিযোগিতায় এক পরাজিত তীরন্দাজ এক জয়ী তীরন্দাজকে আক্রশবশত হত্যা করেন। যুবরাজ প্রতাপাদিত্য তখন রাগে ওই খুনি তীরন্দাজের মুণ্ড কেটে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। ওই তীরন্দাজের বাবা বিক্রমাদিত্যর কাছে ছেলের হত্যার প্রতিবাদ করে বিচার প্রার্থনা করেন। বিক্রমাদিত্য ছেলেকে নির্বাসনে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বুদ্ধি করে বিক্রমাদিত্য ছেলেকে আগ্রায় মোগল দরবারে পাঠিয়ে নির্বাসন কার্যকর করেন। দ্রুতগামী বজরা নিয়ে ইছামতী নদী পেরিয়ে গঙ্গা নদী দিয়ে প্রতাপাদিত্য কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে আগ্রায় পৌঁছন। মোগল দরবারে কয়েক বছর থেকে তিনি যশোহরের দিকে রওনা দেন । সে সময়ে তিনি স্বপ্নে দেখতে পান শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী মা অধিষ্ঠান করছেন এক বনভূমিতে ।
মন্দিরের পশ্চিম দিকে যে বাওর রয়েছে, সেটি অতীতের ইছামতী নদী । প্রতাপাদিত্য স্বপ্নে দেখা এলাকা হিসেবে এখানে তার বজরা নোঙর করেছিলেন বলে আনুমান করা হয় । কয়েকজন সৈনিক নিয়ে বনভূমিতে নেমে তিনি অনেক খোঁজার পরে তিনি অরক্ষিত অবস্থায় মাতৃমূর্তি প্রত্যক্ষ্য করেন । মন্দির পরিচালন সমিতিসূত্রে জানা যায়, সেই বনভূমির কাছে গাঁড়াপোতা এলাকা থেকে কিছু মানুষকে ডেকে মায়ের পূজোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতাপাদিত্য । সে সময়ে দেবীর পূজো চলত একটি পর্ণ কূটিরে । লোকমুখে শোনা যায়, ব্রিঠিশদের সময়ে যুদ্ধ করার সময় ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী ও সিদ্ধেশ্বরী মায়ের কাছে এসে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন ।
মন্দিরটি বর্তমানে এক একর সাতাশ শতক জমির উপরে । অতীতে এখানে পূজো কোন নিয়মে হতো, তা সঠিকভাবে বলা যাবেনা । বিভূতিবাবু বলেন ১৩৮৪ বঙ্গাব্দ থেকে দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিনী মন্দিরে প্রচলিত নিয়মে পূজো হয়ে আসছে । পুরনো ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি ভেঙে ২০০৯ সাল থেকে দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিনী মন্দিরের আদলে তৈরী করা হচ্ছে । বহু মানুষের দানের টাকায় এটি নির্মিত হচ্ছে । শেষ হতে এখনো দুই বছর সময় লাগবে বলে মন্দির কমিটি জানিয়েছে ।